স্বদেশ ডেস্ক: প্রতিটি নববর্ষ নতুন কিছু অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে সামনে আসে। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নন বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল মেসি। ক্যারিয়ারে রেকর্ড ষষ্ঠবারের মতো ব্যালন ডি’অর জয় করে আরেকটি সফল বছর কাটিয়েছেন তিনি। নতুন বছরে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্য স্থির করেছেন ছোট ম্যাজিসিয়ান।
বার্সায় ১৬ মৌসুম কাটানো মেসি ইতিমধ্যে ইতিহাসের পাতায় বিভিন্নভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। তবু নববর্ষে তার সামনে বেশ কিছু নতুন লক্ষ্য পূরণের সুযোগ থাকছে।
২০২০ সালে মেসির সামনে সেই চ্যালেঞ্জগুলো হলো-
নির্দিষ্ট ক্লাবের হয়ে গোলের ক্ষেত্রে পেলেকে ছাড়িয়ে যাওয়া: ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সান্তোসের হয়ে ৬৪৩ গোল করে পেলে এখনও রেকর্ডটি নিজের করে রেখেছেন। কিংবদন্তি ফুটবলারকে ছাড়িয়ে যেতে মেসির আর মাত্র ২৫টি গোল দরকার। সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এ পর্যন্ত বার্সেলোনার জার্সি গায়ে তিনি করেছেন ৬১৮ গোল। সাম্প্রতিক ফর্ম ধরে রাখতে পারলে এ বছরই পেলের রেকর্ড ভাঙতে পারেন মেসি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের পঞ্চম শিরোপা: ২০০৬, ২০০৯, ২০১১ ও ২০১৫ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জেতার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন মেসি। এবার তার দল পাঁচ বছরের শিরোপা খরা কাটাতে বদ্ধপরিকর। চ্যাম্পিয়নস লিগে পঞ্চম শিরোপা জিততে পারলে রিয়াল মাদ্রিদের ফ্রান্সিসকো জেনটোর থেকে মাত্র এক শিরোপা দূরে থাকবেন তিনি। লস ব্লাংকোদের হয়ে জেনটো ছয়টি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতেছেন।
১১তম লা লিগা শিরোপা: লা লিগায় গেল ১১ আসরের মধ্যে ৮টি এবং ১৬টি আসরের মধ্যে ১১টিতেই জয়ী হয়েছেন কাতালান জায়ান্টরা। এগুলোর সব দলেরই গর্বিত সদস্য ছিলেন মেসি। ফ্রান্সিসকো জেনটোর সর্বকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড থেকে আর মাত্র দুটি শিরোপা দূরে রয়েছেন তিনি।
কাপ শিরোপা: কোপা ডেল রে’র রেকর্ড ৩০টি শিরোপা জয় করেছে বার্সেলোনা। এর মধ্যে ৭টির দলে ছিলেন মেসি। আর একটি কোপা শিরোপা জিততে পারলেই সর্বকালের সর্বোচ্চ শিরোপাজয়ী অ্যাথলেটিকের হোসে মারিয়া বেলাস্টে এবং অগাস্টিন পিরু গেইনজাকে স্পর্শ করতে পারবেন তিনি। বর্তমানে ৫১ গোল নিয়ে কোপা ডেল রে’তে খেলছেন খুদে জাদুকর। এ তালিকায় অ্যাথলেটিকের টেলমো জারা ৮১ গোল করে সর্বোচ্চ গোলের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন। তার পরের অবস্থান গুলোতে আছেন যথাক্রমে জোসেপ সামিটিয়ের (বার্সেলোনা, ৬৯), গুইলারমো গোরোসটিজা (অ্যাথলেটিক, ৬৪) ও এডমুন্ডো সুয়ারেজ (ভ্যালেন্সিয়া, ৫৫)। এদের সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে মেসির সামনে।
সপ্তম ব্যালন ডি’অর: গেল বছর রেকর্ড ষষ্ঠ বর্ষসেরা ইউরোপিয়ান খেলোয়াড়ের খেতাব জিতেছেন মেসি। ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৫ ও ২০১৯’র পর তার সামনে সুযোগ রয়েছে এ সংখ্যা আরও বাড়িয়ে নেয়ার।
টানা চতুর্থ গোল্ডেন স্যু: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্সের গ্রাফ কমছে। তবে মেসি যেন প্রতিদিনই নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছেন। ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ইউরোপে ছয়বার সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন। গেল মৌসুমে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন স্যু জয়ের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন ৩২ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। এবার তার লক্ষ্য টানা চতুর্থবারের মতো এ পুরস্কার জয় করা।
পিচিচি রেকর্ড: প্রতিবারই মেসি যখন গোল্ডেন স্যু জয় করেন, তখন স্পেনেও তিনিই সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার পিচিচি অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ইতিমধ্যে অ্যাথলেটিক কিংবদন্তি টেলমো জারার ষষ্ঠবারের রেকর্ড স্পর্শ করেছেন তিনি। তবে আর একটি পিচিচি অ্যাওয়ার্ড পেলেই নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করবেন ফুটবলের বরপুত্র।
বার্সেলোনার হয়ে ক্লাসিকোতে খেলার রেকর্ড: গেল মাসে মৌসুমে প্রথম এল ক্লাসিকোতে মাঠে নামার মধ্য দিয়ে সাবেক বার্সা সতীর্থ জাভি হার্নান্দেজের ৪২টি এল ক্লাসিকো ম্যাচ খেলার রেকর্ড স্পর্শ করেন মেসি। চলতি মৌসুমে তিনি আর একবার রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে মাঠে নামলে তা নতুন ক্লাব রেকর্ড সৃষ্টি করবে। সর্বকালের সর্বোচ্চ ক্লাসিকো খেলার দিক থেকে অবশ্য রিয়ালের সার্জিও রামোস তার চেয়ে ২ ম্যাচ এগিয়ে আছেন।
বার্সেলোনার হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড: সাবেক মিডফিল্ডার জাভি বার্সার হয়ে সর্বোচ্চ ৭৬৭টি ম্যাচ খেলেছেন। মেসির বর্তমান ম্যাচ সংখ্যা ৭০৫। ২০২০ সালে সম্ভবত তিনি জাভিকে ধরতে পারবেন না। তবে সাম্প্রতিক ফর্ম অনুযায়ী, এটি স্পর্শ করা কোনো ব্যাপারই না তার সামনে।
ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ শিরোপা: বার্সেলোনার জার্সি গায়ে মেসি এখন পর্যন্ত ৩৪টি মেজর শিরোপা জয় করেছেন। আর মাত্র তিনটি শিরোপা জিততে পারলেই তিনি ওয়েলস ম্যানেজার এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক কিংকদন্তি রায়ান গিগসকে (৩৬) ছাড়িয়ে যেতে পারবেন।
চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা: রেকর্ডটি দীর্ঘদিনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে। এ পর্যন্ত ইউরোপের সর্বোচ্চ আসরে মেসি করেছেন ১১৪ গোল। কিন্তু জুভেন্টাস সুপারস্টার রোনাল্ডো এ ক্ষেত্রে ১২৮ গোল করে এ তালিকায় এগিয়ে আছেন। ২০২০ সালে অনেক ম্যাচ বাকি রয়েছে। মেসির সামনে যে কারণে আরো এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
আর্জেন্টিনার হয়ে কোপা আমেরিকা জয় : ২০০৮ সালে অলিম্পিকে স্বর্ণ জয়ের পর এখনও আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক শিরোপা জিততে মুখিয়ে আছেন মেসি। এ বছর কোপা আমেরিকা জয়ের মাধ্যমে সেই খরা কাটিয়ে উঠতে পারেন নাম্বার টেন। কলম্বিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে এবারের আসর আয়োজন করবে আর্জেন্টিনা।